নিউ টাউনের সিটি স্কোয়ারে রাজ্যের বৃহত্তম 'হস্তশিল্প মেলা'! পরিকাঠামো উন্নত হলেও ভেন্যুর আকার নিয়ে কারিগরদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
লোকসংবাদ (LokSangbad)
নভেম্বর ২৮, ২০২৫
কলকাতা: শীতের মরসুম শুরু হতেই রাজ্যের হস্তশিল্পের সবথেকে বড় উৎসব 'হস্তশিল্প মেলা' (Hastashilpa Mela) ফিরে এল নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ১-এর সিটি স্কোয়ারে। গত বছর স্থান পরিবর্তনের পর পরিকাঠামো নিয়ে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল, এ বছর তা অনেকটাই কমেছে। কিন্তু মেলার স্থান সংকুলান নিয়ে এখনও রয়ে গেছে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ এবং বস্ত্র দপ্তর (MSME and Textile departments) আয়োজিত এই মেলাটি গত ২১ নভেম্বর কলকাতার মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম উদ্বোধন করেন। মেলা চলবে আগামী ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১টা থেকে রাত ৮.৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকছে এই মেলা।
রেকর্ড ভাঙার লক্ষ্যে ৫৫০০ কারিগর
সংগঠকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বছর মেলায় অংশগ্রহণের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে এসেছেন প্রায় ৫,৫০০ জন কারিগর, যা গত বছরের ৫,১০০-এর বেশি অংশগ্রহণকারীর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। প্রতিটি জেলার কারিগরদের নদীভিত্তিক নামাঙ্কিত প্যাভিলিয়নে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
মেলায় পাটাচিত্র, তাঁতের শাড়ি, গয়না, আসবাবপত্র এবং ঘর সাজানোর হাজারো সামগ্রী নিয়ে এসেছেন কারিগররা। এছাড়াও মোমো থেকে মোয়া, পিঠে-পুলি থেকে ফিশ ফ্রাই - বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যের জন্য রয়েছে বিশেষ ফুড কোর্ট।
পরিকাঠামো নিয়ে স্বস্তি, জায়গা নিয়ে উদ্বেগ
গত বছর যখন ইকো পার্কের ভিড়ে ঠাসা পার্কিং লট থেকে ভেন্যু সিটি স্কোয়ারে স্থানান্তরিত হয়, তখন অনেক কারিগরই অপ্রতুল জায়গা ও দুর্বল পরিকাঠামোর অভিযোগ তুলেছিলেন।
পূর্ব মেদিনীপুর থেকে আসা এক পটুয়া জানান, "গত বছর ভিড়ের চাপে স্টলগুলো খুবই ঠাসাঠাসি ছিল। এবার জায়গা কিছুটা ভালো ভাবে ভাগ করে দেওয়ায় আমরা স্বস্তি পেয়েছি। সন্ধ্যায় আলোর ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত।"
তবে সিটি স্কোয়ার চত্বর যথেষ্ট বড় না হওয়ায় এই বিপুল সংখ্যক কারিগরদের জায়গা দিতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিছু বিক্রেতাকে সংলগ্ন ফুটপাত বা খালি প্লটে বসতে দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের এক কার্পেট বিক্রেতা অভিযোগ করেন, "নতুন জায়গায় বসার কারণে নিয়মিত ক্রেতারা আমাদের খুঁজে পাচ্ছেন না। যারা মেলায় আসছেন, শেষ দিকের স্টলগুলিতে পৌঁছানোর আগেই তাদের কেনাকাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে, ফলে বিক্রি তেমন হচ্ছে না।"
সংগঠকরা অবশ্য বিক্রির বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। তারা মনে করছেন, বিশেষত নিউ টাউন ও সল্ট লেকের ক্রেতাদের উপর ভরসা রাখা যায়, কারণ এই অঞ্চলের মানুষজন হস্তশিল্পের ভালো ক্রেতা। গত বছর মেলায় মোট ৫৬.৫২ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছিল। এই বছর লক্ষ্মীর ভান্ডার ভরতে সেই রেকর্ড ভাঙার আশা দেখছেন আয়োজকরা। মেলা শুরুর পর প্রথম উইকএন্ডে অপ্রত্যাশিত ভিড় হওয়ায় কারিগরদের মুখে হাসি ফুটেছে, যা আগামী দিনগুলির জন্য আশার সঞ্চার করছে।
আরো পড়ুন: