উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট, ₹৫ লাখের জোকার নন—ডা. গণেশ বরইয়া আজ সরকারি হাসপাতালের গর্বিত মেডিক্যাল অফিসার
| এই খবরটি LOKSANGBAD-এর ভারত (India) বিভাগে প্রকাশিত। এটি গণেশ বরইয়া নামের এক অদম্য চিকিৎসকের গল্প, যা দেশের হাজারো মানুষের জন্য এক নতুন প্রেরণা। |
ভাবনগর (গুজরাট): শারীরিক উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট। জন্ম থেকেই ডোয়ার্ফিজম (Dwarfism)-এ আক্রান্ত হওয়ায় একসময় সার্কাস দল ₹৫ লাখের বিনিময়ে তাঁকে 'জোকার' বানাতে চেয়েছিল। আজ সেই ছেলেটিই গোটা দেশের অনুপ্রেরণা। বলছি ২৫ বছর বয়সী ডা. গণেশ বরইয়া-র কথা। দীর্ঘ আইনি লড়াই পেরিয়ে এবং সমস্ত শারীরিক বাধাকে জয় করে তিনি বর্তমানে ভাবনগরের স্যার টি. জেনারেল হাসপাতালের একজন সফল মেডিক্যাল অফিসার। তাঁর এই যাত্রা প্রমাণ করে যে, ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা উচ্চতা দিয়ে নয়, মেধা আর ইচ্ছাশক্তি দিয়েই নির্ধারিত হয়।
আরও পড়ুন (Read More):
1️⃣ 🔹 রাজ্য সংবাদ (West Bengal News)
👉 পশ্চিমবঙ্গের সর্বশেষ আপডেট, জেলার খবর, সমাজজুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
2️⃣ 🔹 দৈনিক রাশিফল (Daily Horoscope)
👉 আজকের রাশিফল, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, শুভ-অশুভ সময়, দৈনন্দিন জ্যোতিষ আপডেট।
3️⃣ 🔹 বিনোদন সংবাদ (Entertainment News)
👉 টলিউড, বলিউড, ওয়েব সিরিজ ও তারকাদের সব খবর এক ক্লিকে।
4️⃣ 🔹 আবহাওয়া / পরিবেশ (Weather & Environment)
👉 আজকের তাপমাত্রা, বৃষ্টি সতর্কতা, মৌসুমী আপডেট ও পরিবেশ সংক্রান্ত খবর।
5️⃣ 🔹 লাইফস্টাইল (Lifestyle & Daily Life)
👉 স্বাস্থ্য, খাদ্য, ভ্রমণ, টেক আপডেট—দৈনন্দিন জীবনে দরকারি সব তথ্য।
গুজরাটের ভাবনগর জেলার ছোট গ্রাম গোরখির বাসিন্দা গণেশ বরইয়ার জীবনে প্রথম কঠিন পরীক্ষা আসে ছোটবেলাতেই। তাঁর উচ্চতা ছিল মাত্র ৩ ফুট, যা দেখে এক সার্কাস দলের লোক তাঁর দরিদ্র বাবা-মায়ের কাছে ৫ লাখ টাকার বান্ডিল ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিল, "আপনার ছেলেটার ভবিষ্যৎ নেই। আমাদের দিন, জোকার বানাব।" চরম অভাবের মাঝেও গণেশের বাবা দৃঢ়তার সঙ্গে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন—"আমার ছেলে পণ্য নয়, মানুষ হবে।" সেই বাবার বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করতে গণেশ দিনরাত পড়াশোনা করে স্কুল জীবন থেকেই মেধার স্বাক্ষর রাখেন।
সংগ্রাম ও আইনি জয়
২০১৮ সালে গণেশ NEET (নিট) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডাক্তার হওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ নেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয় যখন Medical Council of India (MCI) তাঁকে জানায়, '৩ ফুট উচ্চতা এবং ৭২% শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তিনি ডাক্তার হতে পারবেন না।' এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান গণেশ। স্কুলের অধ্যক্ষ ডা. দলপৎ কাটারিয়া এবং আইনজীবীর সহায়তায় তাঁর লড়াই গড়ায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত, সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। দীর্ঘ এক বছরের আইনি লড়াইয়ের পর আদালত এক ঐতিহাসিক রায় দেয়: "উচ্চতা নয়, মেধাই ডাক্তার হওয়ার যোগ্যতা ঠিক করবে।" এই রায়ের ভিত্তিতে তিনি ভাবনগর মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস-এ ভর্তির সুযোগ পান।
সফলতার পথে কঠিন লড়াই
মেডিক্যাল কলেজেও সংগ্রাম শেষ হয়নি। ক্লাসের বেঞ্চে ওঠানামা থেকে শুরু করে প্র্যাকটিক্যালের টেবিলে পৌঁছানো—সবকিছুতেই সহপাঠীদের সাহায্য নিতে হত। প্রথম বর্ষে একবার ফেল করার মতো কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখিও হন তিনি। কিন্তু হাল ছাড়েননি। রাইটার (পরীক্ষার সহকারী) এবং অতিরিক্ত সময়ের সুবিধা নিয়ে তিনি আবার ঘুরে দাঁড়ান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আজ ২০২৫ সালে, ২৫ বছর বয়সে ডা. গণেশ বরইয়া ভাবনগরের সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে মানুষের সেবা করছেন।
ডা. গণেশ বরইয়া এখন হাসপাতালের করিডোরে যখন তাঁর সাদা অ্যাপ্রন পরে হেঁটে যান, রোগীরা প্রথমে হয়তো চমকে ওঠেন। কিন্তু তাঁর নিখুঁত রোগ নির্ণয় এবং সেবা মুগ্ধ করে সবাইকে। যে ছেলেটিকে একসময় ৫ লক্ষ টাকায় জোকার বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, আজ তিনি মানুষের জীবন বাঁচিয়ে চলেছেন। ডা. গণেশ বরইয়ার এই জীবনগাথা প্রমাণ করে যে, সঠিক ইচ্ছাশক্তি ও মেধার সামনে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কেবলই একটি সংখ্যা। তিনি হাজারো স্বপ্ন না-হারানো মানুষের জন্য এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।