Shanti Niketan Rash Utsav: রাসপূর্ণিমার আলোয় ভাসল শান্তিনিকেতন ও বাংলার মন্দির প্রাঙ্গণ: ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ও ভক্তির সমাগম

রাসপূর্ণিমার আলোয় ভাসল শান্তিনিকেতন ও বাংলার মন্দির প্রাঙ্গণ: ঐতিহ্যের মেলবন্ধন ও ভক্তির সমাগম

Ras Purnima West Bengal, Shantiniketan Ras Utsav, Kartik Purnima Celebrations, Radha Krishna Rasleela, 6 November 2025 Festivals, Bengal Temple Puja, Navadwip Mayapur Ras, Vaishnava Traditions, Folk Dance West Bengal, Baul Gaan Shantiniketan, Cultural Festival Bengal, Bengali Traditions.



কলকাতা, ৬ নভেম্বর ২০২৫: (নিজস্ব ডেস্ক)
গতকাল, অর্থাৎ ৫ নভেম্বর ছিল কার্তিক পূর্ণিমা, যা বাঙালি ঐতিহ্যে রাসপূর্ণিমা নামেই সমধিক পরিচিত। এই বিশেষ তিথিতে যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে রাধাকৃষ্ণের রাসলীলা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন মন্দিরে, বিশেষত বৈষ্ণবপীঠগুলিতে, মহা সমারোহে পালিত হয়েছে এই উৎসব। তবে এই উৎসবের এক বিশেষ আকর্ষণ হলো বিশ্বভারতীর শান্তিনিকেতনে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব, যা তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক আবহে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।

শান্তিনিকেতনের রাস উৎসব: ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মিলন

শান্তিনিকেতনের রাস উৎসব মূলত বিশ্বভারতীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও বৈষ্ণব ঐতিহ্যের এক দারুণ মিশেল। এখানে রাস পূজা এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত লোকনৃত্য ও সঙ্গীতের একটি বিশেষ ধারা দেখা যায়।

  • পুণ্যাহ ও রাসের সূচনা: রাসপূর্ণিমার দিন সকালে পুণ্যাহের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। বিশ্বভারতীর উপাচার্য ও অন্যান্য পদাধিকারীরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

  • রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহ: শান্তিনিকেতনে রাধাকৃষ্ণের যুগল বিগ্রহকে বিশেষভাবে সাজানো হয়। এই সময়টিকে বলা হয় "ফুলের ডেকোরেশন" বা পুষ্পসজ্জা, যা দেখতে দূর দূরান্ত থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন।

  • বাউল ও লোকনৃত্য: শান্তিনিকেতনের মাঠে বাউলের আখড়া বসে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বাউল শিল্পীরা তাঁদের গান পরিবেশন করেন। এছাড়াও, সাঁওতালি নৃত্য ও অন্যান্য লোকনৃত্যের আয়োজন করা হয়, যা উৎসবের পরিবেশকে আরও বর্ণময় করে তোলে।

  • সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: বিশ্বভারতীর শিক্ষার্থীরা এবং স্থানীয় শিল্পীরা রবীন্দ্রনৃত্য, কীর্তন এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এই সময়টিতে শান্তিনিকেতন এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে, যেখানে ধর্মীয় ভাবনার সাথে সংস্কৃতির এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটে।

বাংলার বিভিন্ন মন্দিরে রাস ও লোকসমাগম

শান্তিনিকেতনের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বৈষ্ণবপীঠ ও মন্দিরেও রাস উৎসব পালিত হয়েছে মহাসমারোহে।

  • নবদ্বীপ-মায়াপুর: বৈষ্ণব তীর্থ নবদ্বীপ ও মায়াপুরে এই উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম। ইসকন মন্দির সহ অন্যান্য আখড়াগুলিতে দিনভর চলেছে নামসংকীর্তন, আরতি এবং রাসলীলার বিশেষ আয়োজন। রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহগুলিকে নতুন পোশাকে সজ্জিত করে বিভিন্ন সাজে সাজানো হয়। এখানে ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

  • বৃন্দাবন-কলকাতা কানেকশন: পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ এই দিনে উত্তরপ্রদেশের বৃন্দাবনে গিয়ে রাসলীলায় অংশ নেন। তবে যারা যেতে পারেননি, তারা কলকাতার বিভিন্ন রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে, যেমন বড়বাজারের বিভিন্ন মন্দির বা থেক্সটারি বাড়িতে আয়োজিত রাস উৎসব ও শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন।

  • গ্রামীণ বাংলার রাস: গ্রামীণ পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে বিভিন্ন জমিদার বাড়ি বা প্রাচীন মন্দিরগুলিতে আজও সাড়ম্বরে পালিত হয় রাস উৎসব। কোথাও রাধাকৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়, কোথাও আবার রাসচক্র ঘুরিয়ে বা বিশেষ মণ্ডপে লোকনৃত্য ও নাটকের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবগুলি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

ভক্তি ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন

রাসপূর্ণিমা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার এই উদযাপন ভক্তি, আনন্দ এবং সামাজিক মিলনের এক অসাধারণ প্রতীক। এই দিনে মন্দিরে মন্দিরে ভক্তদের প্রার্থনা, সংকীর্তন এবং উৎসবের পরিবেশ এক আধ্যাত্মিক সুধা বয়ে আনে, যা আগামী এক বছরের জন্য মানুষকে আশার আলো দেখায়।

নবীনতর পূর্বতন