Regional Food Habits: অসম থেকে নাগাল্যান্ড, কেন এখানকার 'Weird' খাবার বাকি ভারত থেকে আলাদা? (Assam to Nagaland)

উত্তর-পূর্ব ভারতের ভিন্ন খাদ্য সংস্কৃতি, বাকি দেশ থেকে আলাদা কেন?




ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, যা ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত, শুধুমাত্র তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং তার স্বতন্ত্র রন্ধনশৈলীর জন্যও বিশেষ পরিচিত। এখানকার উপজাতি ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর খাদ্যাভ্যাস বাকি ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটাই ভিন্ন। এই খাদ্য তালিকায় এমন কিছু উপাদান দেখা যায়, যা অন্য রাজ্যের মানুষের কাছে 'অদ্ভুত' বা 'উদ্ভট' বলে মনে হতে পারে। তবে এর নেপথ্যে লুকিয়ে আছে এই অঞ্চলের ভূগোল, পরিবেশগত বাধ্যবাধকতা, এবং প্রাচীন ঐতিহ্য। এখানকার খাদ্য মূলত কম তেল, কম মশলা, এবং স্থানীয় উপাদান (যেমন গেঁজানো বাঁশের কোঁড়, বিভিন্ন ধরনের শাক ও পাহাড়ি মশলা) নির্ভর, যা দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় একেবারেই আলাদা।

Fermented Bamboo Shoot
Fermented Bamboo Shoot


উত্তর-পূর্বের রাজ্যেগুলিতে বিভিন্ন ধরনের পোকা, গেঁজানো উপাদান এবং মাংসের এমন কিছু অংশ খাওয়া হয়, যা বাকি ভারতে সাধারণত প্রচলিত নয়। অসমে এরি রেশম চাষ হয় এবং সুতো বের করার পর যে পিউপা (pupae) বা পোকার লার্ভা অবশিষ্ট থাকে, তা ফেলে না দিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়—একে এরি পোলু বলা হয়। এটি প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস এবং খেতে অনেকটা বাদামের মতো স্বাদযুক্ত। অন্যদিকে, নাগাল্যান্ডে অত্যন্ত জনপ্রিয় হল আখুনি (Axone), যা হল গেঁজানো সয়াবিনের পেস্ট বা কেক। এর তীব্র, কড়া ও ঝাঁঝালো গন্ধ এতটাই বেশি যে এটি তৈরি করার সময় আশেপাশের প্রতিবেশীরা প্রায়শই আপত্তি জানান। এই উপাদানটি মূলত মাংসের তরকারিতে উমামি (Umami) স্বাদ যোগ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, উত্তর-পূর্বের প্রায় সব রাজ্যেই গেঁজানো বাঁশের কোঁড় (Fermented Bamboo Shoot) একটি প্রধান উপাদান, যারও একটি তীব্র টক ও কড়া গন্ধ রয়েছে এবং যা তরকারিকে টক (Tenga) স্বাদ দিতে ব্যবহার করা হয়।



এই খাদ্যাভ্যাস বাকি ভারতে প্রচলিত না হওয়ার প্রধান কারণগুলি হল সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ভিন্নতা, ভূগোল এবং খাদ্য সংরক্ষণের ঐতিহ্য। মূল ভূখণ্ডের বিশাল অংশে, বিশেষত উত্তর ভারতে, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে নিরামিষ খাদ্যের প্রাধান্য দেখা যায়। কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনগোষ্ঠীগুলির জীবনযাত্রা প্রকৃতি এবং শিকার নির্ভর হওয়ায় তাদের খাদ্যে মাংস, পোকা ও বিভিন্ন প্রাণীজ প্রোটিন গ্রহণের চল প্রাচীনকাল থেকেই রয়েছে। এছাড়াও, দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে ঐতিহাসিকভাবে সহজে কৃষিজমি বা অন্যান্য প্রোটিনের উৎসের অভাব ছিল। তাই খাদ্য সংরক্ষণের জন্য গেঁজানোর পদ্ধতি (Fermentation) এবং সহজলভ্য পোকা বা বাঁশের কোঁড় প্রোটিন ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। উত্তর ভারতের অনেক অংশে খাদ্যের বিশুদ্ধতা নিয়ে যে ধারণা প্রচলিত, সেখানে পোকা বা কড়া গন্ধযুক্ত গেঁজানো খাবার অশুচি বলে গণ্য হয়, যা খাদ্য-ভিত্তিক বৈষম্যকে উসকে দেয়।




এছাড়া, একসময় নাগাল্যান্ড ও মিজোরামের মতো কিছু রাজ্যে কুকুর মাংস (Dog Meat) জনপ্রিয় ছিল, যা প্রাণী অধিকার কর্মীদের উদ্বেগের প্রধান কারণ ছিল। প্রাণী অধিকার কর্মী এবং সংস্থাগুলি এই প্রথা বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকারগুলির কাছে দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানিয়ে আসছিল। এই আন্দোলনের ফলস্বরূপ, ২০২০ সালের জুলাই মাসে নাগাল্যান্ড রাজ্য সরকার কুকুরের মাংসের বাণিজ্যিক আমদানি, বিক্রি এবং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। মিজোরামও এর আগে একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তকে পশু অধিকার কর্মীরা স্বাগত জানালেও, স্থানীয় কিছু গোষ্ঠী এটিকে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যরীতির উপর হামলা বলে সমালোচনা করেছিল। উত্তর-পূর্বের খাদ্য সংস্কৃতি নিছকই 'অদ্ভুত' নয়, বরং হাজার বছরের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের একটি প্রতিচ্ছবি। এই সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য প্রয়োজন আরও বেশি সহনশীলতা এবং আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান।

সূত্র: সংবাদ সংস্থা, বিভিন্ন গবেষণা পত্র, হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল-এর রিপোর্ট।

নবীনতর পূর্বতন