SIR (Special Intensive Revision) আতঙ্ক: ফর্ম ফিলাপের 'মারাত্মক চাপ' ও বাংলায় একের পর এক বিএলও-র অসুস্থতা, গ্রামে ছড়াচ্ছে চরম উদ্বেগ

SIR (Special Intensive Revision) আতঙ্ক: ফর্ম ফিলাপের 'মারাত্মক চাপ' ও বাংলায় একের পর এক বিএলও-র অসুস্থতা, গ্রামে ছড়াচ্ছে চরম উদ্বেগ

SIR (Special Intensive Revision)


SIR (Special Intensive Revision) প্রকল্পের জন্য চলছে তথ্য সংগ্রহের কাজ। কিন্তু এই কাজ এখন শুধুমাত্র সরকারি ফর্ম পূরণের একটি প্রক্রিয়া নয়, বরং রাজ্যজুড়ে এক গভীর সামাজিক আতঙ্ক এবং মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিতর্কের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা—অর্থাৎ বিএলও (BLO)-দের উপর তৈরি হওয়া অসহনীয় চাপ এবং বাংলার গ্রামে গ্রামে নাগরিকত্ব হারানোর ভয় থেকে ছড়িয়ে পড়া মারাত্মক গুজব। এই কাজের ফলস্বরূপ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক বিএলও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

BLO-দের ওপর 'অসম্ভব' কাজের চাপ

বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও-রা সাধারণত স্কুলের শিক্ষক, সরকারি কর্মী বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হয়ে থাকেন। নির্বাচন কমিশনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীদের এখন রাতারাতি বিশাল সংখ্যক SIR ফর্ম পূরণের কঠিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের তথ্য পূরণ করার নির্দেশ এসেছে। এই 'মারাত্মক সময়সীমা'র চাপ সামলাতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএলও লোকসংবাদকে জানান, "আমরা শিক্ষক। রাজনীতির লোক নই। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাজনৈতিক চাপ সামলাতে হচ্ছে। বাড়িতে গিয়ে যখন শুনছি, ফর্ম জমা না দিলে তাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে, তখন মানসিক চাপ নেওয়া অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।"

বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থতা, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি আত্মহত্যার চেষ্টার মতো গুরুতর খবর আসছে। এই চাপকে অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ করার দাবি উঠেছে।

গ্রামে গ্রামে 'গুজব' ও সামাজিক আতঙ্ক

বিএলও-দের কাজের পাশাপাশি, SIR ফর্মকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ভুল ধারণা এবং গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এই গুজবগুলি পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলেছে |

CAA আতঙ্ক: বহু মানুষ নিশ্চিত যে এটি আসলে CAA (Citizenship Amendment Act)-এরই প্রথম ধাপ। ফলস্বরূপ, তথ্যের সামান্য ভুল হলে তাদের 'বিদেশি' ঘোষণা করা হবে এই ভয় গ্রাস করেছে।

বাড়ি হারানোর ভয়: গ্রামে এমন গুজবও ছড়াচ্ছে যে, ফর্মের তথ্য সঠিক না হলে সরকার তাদের জমি বা বাড়ি ভেঙে দেবে। বিশেষত, আর্থিকভাবে দুর্বল বা প্রান্তিক মানুষজন এই গুজবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত।

আর্থিক শোষণ: এই ফর্ম পূরণের সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু চক্র গ্রামে প্রবেশ করেছে। তারা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে বলছে, "বিশেষ ফি" না দিলে ফর্ম পূরণ হবে না।

উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রত্যন্ত গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধা বলেন, "আমি জন্ম তারিখের কাগজ খুঁজে পাচ্ছি না। বিএলও বললেন, যা আছে তাই লিখতে। কিন্তু পাড়ার লোক বলছে, ভুল লিখলে নাম কেটে দেবে। সারা রাত ঘুম হচ্ছে না, মনে হচ্ছে এতদিনের ভিটে মাটি সব চলে যাবে।"

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) এবং বিরোধী দল বিজেপি (BJP) উভয়ই এই SIR প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে, 

বিশেষজ্ঞদের মত: অবিলম্বে প্রশাসনকে একটি 'গুজব বিরোধী হেল্পলাইন' চালু করতে হবে এবং প্রতিটি স্তরের কর্মীকে স্পষ্ট নির্দেশিকা দিতে হবে যে, এটি কেবল তথ্যের কাজ, নাগরিকত্ব প্রমাণের প্রক্রিয়া নয়। রাজনৈতিক চাপানউতোর বন্ধ না হলে এই সামাজিক আতঙ্ক আরও গভীর হবে।


গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন অনুমিত সূত্র, বাজার গবেষণা এবং সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণসাংবাদিকতামূলক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই প্রকাশিত তথ্যগুলি বা মতামতগুলি লোকসংবাদ (LokSangbad) সংস্থা বা এর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে দেওয়া কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি, নিশ্চিত দাবি বা প্রতিশ্রুতি নয়।

নবীনতর পূর্বতন