SIR (Special Intensive Revision) অর্থাৎ বিশেষ নিবিড় সংশোধন কী?

 

Special Intensive Revision (SIR), ভোটার তালিকা সংশোধন, পশ্চিমবঙ্গে SIR, এনুমারেশন ফর্ম, BLO, Booth Level Officer, খসড়া ভোটার তালিকা, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা, ২০০২ ভোটার তালিকা, Base Roll, আধার কার্ড, নাগরিকত্বের প্রমাণ, ERO, Electoral Registration Officer, দাবি ও আপত্তি, Legitiamte Voter

SIR (Special Intensive Revision) অর্থাৎ বিশেষ নিবিড় সংশোধন কী?

SIR হলো ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI)-এর একটি বিশেষ কর্মসূচি, যার মাধ্যমে একটি নির্বাচনী এলাকার ভোটার তালিকা নতুন করে, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং নিবিড় যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। এটি সাধারণ বার্ষিক সংশোধন প্রক্রিয়ার থেকে অনেক বেশি গভীর ও বিস্তৃত।

ছবিটিতে যেমন নির্বাচন কমিশনের প্রতীক ও ভোট দেওয়া আঙুল দেখানো হচ্ছে, তেমনই SIR প্রক্রিয়াটি হলো— "একটি স্বচ্ছ, নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরি করে নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা।"

SIR-এর মূল উদ্দেশ্য

SIR প্রক্রিয়ার তিনটি প্রধান লক্ষ্য রয়েছে:

  1. বৈধ ভোটারদের সুরক্ষা: নিশ্চিত করা যে, কোনো যোগ্য ভারতীয় নাগরিকের নাম যেন ভোটার তালিকা থেকে ভুল করে বাদ না পড়ে যায়।

  2. অবৈধ ভোটারদের অপসারণ: তালিকা থেকে মৃত, স্থানান্তরিত (ডুপ্লিকেট), এবং বেআইনি বিদেশী অভিবাসী (যাদের নাগরিকত্বের বৈধ প্রমাণ নেই) ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া।

  3. পুরোনো তালিকার মানদণ্ড: পশ্চিমবঙ্গে ২০০২-২০০৪ সালের শেষ নিবিড় সংশোধিত ভোটার তালিকাটিকে ভিত্তি (Base Roll) হিসেবে ব্যবহার করা।


🧭 পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে SIR-এর ব্যাখ্যা

পশ্চিমবঙ্গসহ ১২টি রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই দ্বিতীয় পর্যায়ের SIR প্রক্রিয়া চলছে।

বিষয়ব্যাখ্যা
পদ্ধতিবুথ লেভেল অফিসার (BLO) প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে তিনবার যাবেন। তিনি ভোটারদের একটি 'ইউনিক এনুমারেশন ফর্ম' দেবেন, যা পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি-সহ জমা দিতে হবে।
নাগরিকত্বের প্রশ্নযাদের নাম ২০০২-২০০৪ সালের পুরোনো তালিকায় নেই (অথবা তাদের বাবা-মায়ের নামও মেলানো যাচ্ছে না), তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হতে পারে। ECI ১১টি নির্দেশক নথি জমা দেওয়ার কথা বলেছে, যার মধ্যে আধার কার্ড কেবল পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য হবে, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে নয়।
রাজনৈতিক বিতর্কবিরোধীরা SIR প্রক্রিয়াকে NRC (ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস)-এর পূর্ব-পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তাদের অভিযোগ, এর মাধ্যমে বৈধ ভোটারদের হয়রানি করে বাদ দেওয়া হতে পারে। অন্যদিকে শাসকদল এই প্রক্রিয়ায় 'বাংলাদেশী' ভোটারদের বাদ পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
CEO-র আশ্বাসরাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) বারবার আশ্বাস দিয়েছেন যে, "কোনো বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হবে না" এবং গোটা প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হবে।

SIR চলাকালীন প্রত্যেক ভোটারকে তাদের বর্তমান অবস্থান যাচাই করে 'ইউনিক এনুমারেশন ফর্ম' পূরণ করতে হবে।

  • ফর্ম প্রাপ্তি: বুথ লেভেল অফিসার (BLO) আপনার বাড়িতে এসে এই প্রি-ফিল্ড ফর্মটি দেবেন। এটিতে আপনার বর্তমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী তথ্য আগে থেকেই ভরা থাকবে।

  • কারা নথি জমা দেবেন না?

    • যাঁদের নাম ২০০২-২০০৪ সালের রাজ্যের শেষ নিবিড় সংশোধিত ভোটার তালিকায় ছিল।

    • যদি আপনার নাম না থাকে, কিন্তু আপনার বাবা-মায়ের নাম সেই পুরোনো তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়।

    • আপনি voters.eci.gov.in পোর্টালে গিয়ে পুরোনো তালিকার সঙ্গে নিজের বা বাবা-মায়ের নাম মিলিয়ে নিতে পারবেন। এই 'ম্যাচিং' হলে অতিরিক্ত নথি লাগবে না।

  • কারা নথি জমা দেবেন?

    • যাঁদের নাম ২০০২-২০০৪ সালের তালিকায় নেই এবং পুরোনো তালিকার সঙ্গে কোনও সংযোগ স্থাপন করা যাচ্ছে না

    • যাঁরা নতুন ভোটার (১৮ বছর বা তার বেশি), বা সম্প্রতি অন্য রাজ্য/এলাকা থেকে এসেছেন।

    • যাঁরা নতুন ভোটার হিসেবে নাম তুলতে চান (ফর্ম-৬)।

  • কর্মসূত্রে বাইরে থাকলে: কেউ যদি কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন বা প্রবাসী হন, তবে তিনি অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে ECINet অ্যাপ বা voters.eci.gov.in পোর্টালে তার তথ্য আপলোড করতে পারবেন।

  • BLO-এর ভূমিকা: BLO প্রতিটি বাড়িতে অন্তত তিনবার যাবেন। তিনি ফর্ম সংগ্রহ করে ইআরও/এইআরও-র কাছে জমা দেবেন।


৩. 📑 নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশক নথি

যে ভোটাররা পুরোনো তালিকার সঙ্গে নিজেদের সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন না, তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কিছু নথি দাখিল করতে হতে পারে। নির্বাচন কমিশন দ্বারা অনুমোদিত ১১টি নির্দেশক নথি (Indicative Documents) হলো:

  1. কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার বা পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং-এর কর্মী বা পেনশনভোগী হিসেবে ইস্যু করা পরিচয়পত্র।

  2. ১ জুলাই, ১৯৮৭-এর পূর্বে সরকার/স্থানীয় কর্তৃপক্ষ/ব্যাঙ্ক/পোস্ট অফিস/এলআইসি/পিএসইউ দ্বারা ভারতে ইস্যু করা যেকোনো পরিচয়পত্র/নথি।

  3. সক্ষম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা জন্ম শংসাপত্র (Birth Certificate)

  4. পাসপোর্ট (Passport)

  5. স্বীকৃত বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ইস্যু করা ম্যাট্রিকুলেশন/শিক্ষাগত শংসাপত্র।

  6. সক্ষম রাজ্য কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা স্থায়ী বাসিন্দা শংসাপত্র (Permanent Residence Certificate)

  7. বনাধিকার শংসাপত্র (Forest Right Certificate)।

  8. ওবিসি/এসসি/এসটি বা সক্ষম কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যু করা যেকোনো জাতি শংসাপত্র।

  9. ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (যেখানে আছে)।

  10. রাজ্য/স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রস্তুত পারিবারিক নিবন্ধন (Family Register)।

  11. সরকার কর্তৃক জমি/বাড়ি বরাদ্দের শংসাপত্র।

  12. আধার কার্ড (Aadhaar Card): সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, আধার কার্ডকে ১২তম নথি হিসেবে পরিচয় প্রমাণের জন্য জমা দেওয়া যাবে, তবে এটি নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়

গুরুত্বপূর্ণ নোট: যদি উপরে উল্লিখিত ১১টি নথির বাইরেও অন্য কোনো নথি আপনার নাগরিকত্ব বা বয়সের প্রমাণ করতে পারে বলে আপনি মনে করেন, তবে তা ইআরও (ERO)-এর কাছে শুনানির মাধ্যমে গ্রহণ করা হতে পারে।


৪. 🔗 গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক ও যোগাযোগের মাধ্যম

বিষয়লিঙ্ক / যোগাযোগ
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের কার্যালয়www.ceowestbengal.nic.in (সময়সূচী ও আপডেট জানতে)
ভোটার তালিকায় নাম খোঁজাelectoralsearch.in অথবা voters.eci.gov.in
ফর্ম ডাউনলোড (ফর্ম-৬, ৭, ৮)voters.eci.gov.in (অথবা আপনার জেলার NIC পোর্টালে)
জাতীয় ভোটার সার্ভিস পোর্টাল (NVSP)www.nvsp.in
হেল্পলাইন নম্বর1950 (জাতীয় ভোটার হেল্পলাইন)
নবীনতর পূর্বতন