বিহার নির্বাচন ফলাফল: এনডিএ-র বিপুল জয়, মোদী-শাহের অভিনন্দন বার্তা, বাংলার ভোটে প্রভাবের ইঙ্গিত
পটনা, ১৪ নভেম্বর ২০২৫: বহু প্রতীক্ষিত বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা হলো আজ, এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের ক্ষমতায় ফিরল জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (NDA)। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ (JDU) এবং বিজেপির (BJP) জোট বিরোধী 'মহাগঠবন্ধন'কে (Grand Alliance) পরাজিত করে সরকার গঠনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
এক নজরে বিহার নির্বাচনের ফলাফল (২৪৩ আসন)
চূড়ান্ত ফলাফল অনুযায়ী, এনডিএ জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসন সংখ্যা ১২২।
| জোট | দলসমূহ | আসন সংখ্যা (মোট) |
| এনডিএ (NDA) | বিজেপি, জেডিইউ, এইচএএম (HAM), ভিআইপি (VIP) | ১২৫ |
| মহাগঠবন্ধন | আরজেডি (RJD), কংগ্রেস (INC), বাম দলসমূহ | ১১০ |
| অন্যান্য | এলজেপি (LJP), এআইএমআইএম (AIMIM), বিএসপি (BSP), নির্দল | ৮ |
বিজেপি: আসন সংখ্যার নিরিখে জোটের মধ্যে বিজেপিই সর্বাধিক আসনে জয়ী হয়েছে।
আরজেডি (RJD): তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন আরজেডি একক বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এলেও জোটগতভাবে সরকার গড়তে ব্যর্থ হয়েছে।
বিজয়োল্লাসে ভাসছে বিজেপি: মোদী, শাহ ও নড্ডার কড়া বার্তা
বিহারের এই জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত বিজেপি শিবির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নড্ডা, প্রত্যেকেই বিহারবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং এই ফলকে 'ঐতিহাসিক' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী:
জয় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমাজমাধ্যমে বিহারবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, 'সুশাসন, বিকাশ, জনকল্যাণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জয় হয়েছে।' শাসক জোটের এই সাফল্যকে তিনি 'ঐতিহাসিক এবং অভূতপূর্ব' বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ:
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিজয়কে মোদী সরকারের নীতির প্রতি জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি সমাজমাধ্যমে লেখেন, "বিহারের জনতার প্রতিটি ভোট অনুপ্রবেশকারী এবং তাঁদের প্রশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে মোদী সরকারের নীতির প্রতি আস্থার প্রতীক। তাঁরা (অনুপ্রবেশকারীরা) দেশের সম্পদের শোষণ করেন। ভোটব্যাঙ্কের স্বার্থে যাঁরা অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দেন, তাঁদের যোগ্য জবাব দিয়েছেন জনতা।"
বিজেপি সভাপতি জে.পি. নড্ডা:
দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতর থেকে নড্ডা বিহারের ফলকে 'সুনামি' বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “এই সুনামি স্পষ্ট করে দিয়েছে বিহারের জনতা হোক বা দেশের জনতা— সকলেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখেছেন। এই ভোট ছিল বিকাশ এবং জঙ্গলরাজের মুখোমুখি লড়াই। মানুষ এই নির্বাচনে উন্নয়নকে বেছে নিয়েছেন।”
নীতীশ কুমারের প্রতিক্রিয়া:
বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিনন্দন জানান। তিনি শাসক জোট এনডিএ-তে ঐক্যের বার্তা তুলে ধরে লেখেন, 'এ বারের ভোটে এনডিএ সম্পূর্ণ ঐক্য দেখিয়েছে এবং বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।'
বাংলার ভোটে কি প্রভাব ফেলবে বিহারের ফল?
২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিহারের এই ফলাফল নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ফল পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে:
বিজেপির মনোবল বৃদ্ধি: বিহারে বিজেপির শক্তিশালী পারফরম্যান্স, বিশেষত একক বৃহত্তম দল আরজেডি-কে আটকে দেওয়া, পশ্চিমবঙ্গে দলের কর্মীদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে। বাংলার ভোটে নিজেদের জেতার সম্ভাবনা তুলে ধরতে তারা বিহারের সাফল্যকে ব্যবহার করবে।
মহাজোটের ধারণায় আঘাত: বিহারে বিরোধী মহাগঠবন্ধন (আরজেডি, কংগ্রেস, বামদল) সরকার গড়তে ব্যর্থ হওয়ায়, বাংলায় বিজেপি বিরোধী দলগুলির একত্রিত হওয়ার ধারণায় কিছুটা ধাক্কা লাগতে পারে। অন্যদিকে, বাংলায় তৃণমূলের একার লড়াইয়ের উপর প্রভাব নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
আঞ্চলিক বনাম জাতীয়তাবাদ: বিহারে বিজেপি 'উন্নয়ন' এবং 'জাতীয়তাবাদ'-এর যে বার্তা দিয়েছে, তা সেখানকার ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি এই একই বার্তা জোরদার করতে পারে, যেখানে তৃণমূল কংগ্রেস মূলত আঞ্চলিক এবং বাঙালি আবেগকে কাজে লাগিয়ে থাকে।
সংখ্যালঘু ভোটের সমীকরণ: বিহারে এআইএমআইএম (AIMIM) কিছু আসনে জয়লাভ করায়, সংখ্যালঘু ভোটে বিভাজন দেখা যেতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের ভোটেও যদি মিম (AIMIM)-এর মতো দলগুলি প্রভাব ফেলতে শুরু করে, তবে তা সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে, যা প্রধানত তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক।
তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট ভিন্ন। স্থানীয় দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের বাংলায় শিকড় অনেক গভীরে। তাই বিহারের ফলাফল সরাসরি বাংলার ভোটে প্রতিফলিত হবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন কেউই। তবে জাতীয় স্তরে বিজেপির শক্তিশালী সংগঠন এবং সফল নির্বাচনী কৌশল ফের একবার প্রমাণিত হলো।