দক্ষিণবঙ্গে রেললাইনে হাতির মৃত্যু রোধে DAS প্রযুক্তি আনতে উদ্যোগী বন দফতর
কলকাতা: দক্ষিণবঙ্গের রেললাইনে হাতির মৃত্যুর ঘটনা রোধে বড় পদক্ষেপ নিল বন দফতর। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামের কাছে বারবিল-হাওড়া জন শতাব্দী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় দুই শাবক-সহ তিনটি হাতির মৃত্যু ঘটে। সেই ঘটনার পরই বন দফতর রেল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত Distributed Acoustic Sensing (DAS) প্রযুক্তি বসানোর আবেদন জানিয়েছে।
কোন কোন জায়গায় বেশি ঝুঁকি?
রেল ও বন দফতরের যৌথ পরিদর্শনে দেখা গেছে, পাঞ্চেত ও রূপনারায়ণ ডিভিশন হাতির চলাচলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। তাই প্রথম ধাপে এই রুটগুলিতে DAS প্রযুক্তি বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গে সফলতা
প্রধান বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আধিকারিক সন্দীপ সুন্দারিয়াল জানান, উত্তরবঙ্গে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আশাজনক ফল পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন— “গত তিন বছরে একটিও হাতির মৃত্যু ঘটেনি উত্তরবঙ্গের রেলপথে। এই প্রযুক্তি দুর্ঘটনা এড়াতে বড় ভূমিকা নিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গেও সমানভাবে কার্যকর হবে বলে আশা করছি।”
দক্ষিণবঙ্গে হাতির সংখ্যা বাড়ছে
অফিসিয়াল তথ্য অনুযায়ী—
-
১৯৮৫ সালে দক্ষিণবঙ্গে হাতির সংখ্যা ছিল মাত্র ২২
-
বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২২৫
২০০০ সাল থেকে এই অঞ্চলে ট্রেন দুর্ঘটনায় ৬৫টিরও বেশি হাতির মৃত্যু হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি হাতির চলাচল হয় খড়গপুর–টাটানগর–রাউরকেলা রুটে।
কীভাবে কাজ করে DAS প্রযুক্তি?
-
DAS হলো ভারতীয় রেলের তৈরি একটি AI-চালিত ইন্ট্রুশন ওয়ার্নিং সিস্টেম
-
রেললাইনের পাশে বসানো অপটিক্যাল ফাইবার সেন্সর হাতির পায়ের শব্দ বা কম্পন ধরে ফেলে
-
সিগন্যাল সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে যায় ট্রেন চালক, স্টেশন ম্যানেজার ও কন্ট্রোল রুমে
-
ফলে দ্রুতগতিতে ট্রেন থামানো বা গতি কমানো সম্ভব হয়
সচেতনতা ও স্পিড কন্ট্রোল জরুরি
প্রযুক্তির পাশাপাশি বন দফতর রেলওয়েকে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে বলেছে—
-
ঝুঁকিপূর্ণ রুটে অভিজ্ঞ চালক মোতায়েন
-
হাতির চলাচলের প্যাটার্ন নিয়ে চালকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা
-
ভোর ও সন্ধ্যায় (যখন হাতি বেশি চলাচল করে) স্পিড লিমিট কঠোরভাবে মানা
বন দফতরের বার্তা
এক শীর্ষ বন আধিকারিক বলেন—
“হাতি বাঁচানো যেমন দায়িত্ব, তেমনই রেলযাত্রীদের নিরাপত্তাও। প্রযুক্তি ও সচেতনতা মিলিয়ে আমরা বহু প্রাণ বাঁচাতে পারব।”
